প্রবন্ধ

সংস্কার, পুনর্বাসন এবং নিপীড়িতদের প্রতি সমর্থনের আহ্বান [মসজিদে নববির জুমার খুতবা (২৪ নভেম্বর, ২০২৩)]

লেখক:মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৩
১৩৮৪ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

মূল : আলি বিন আব্দুর রহমান আল-হুজাইফি

ইমাম ও খতিব, মসজিদে নববি, মদিনা মুনাওয়ারা

 

প্রথম খুতবা

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মহিমান্বিত, সম্মানিত, অধিপতি, অত্যন্ত পবিত্র এবং শান্তির আধার।জানা-অজানা সকল নিয়ামতের জন্য আমরা তাঁর প্রশংসা করি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, যিনি পরম করুণাময় ও দয়ালু। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমাদের নবি ও আদর্শ মুহাম্মদ সা. তাঁর বান্দা ও রসূল যিনি সর্বোত্তম জীবনবিধান দিয়ে প্রেরিত হয়েছেন। হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও সাহাবাদের ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।  

হে মুসলিমগণ! আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্টির অধিকার রক্ষায় তাঁকে ভয় করুন। যে তাকওয়া অবলম্বন করেছে সে সফলআর যে হক নষ্ট করে সীমালঙ্ঘন করেছে সে ক্ষতিগ্রস্ত।

(وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا * وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ)[الطَّلَاقِ: 2-3]

অর্থাৎ, যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোন পথ তৈরি করে দেবেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিজিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে।।[সুরা তালাক : 2-3]

(وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا)[الطَّلَاقِ: 5]

অর্থাৎ, যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তাঁর পাপরাশি মার্জনা করবেন এবং তাকে দিবেন মহা পুরস্কার।

(فَأَمَّا مَنْ طَغَى * وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا * فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى * وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى * فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى)[النَّازِعَاتِ: 37-41]

অর্থাৎ, তখন যে ব্যক্তি অবাধ্যতা করেছিল এবং পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছিল। জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আর যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় পোষণ করত এবং নিজেকে মন্দ চাহিদা হতে বিরত রাখত। জান্নাতই হবে তার ঠিকানা।[সুরা নাজিয়াত : 37-41]

মানবজাতির উভয় জগতের সুখ-শান্তি ও কল্যাণময় জীবন রব এবং তাঁর সৃষ্টির হক আদায়ের মধ্যেই নিহিত। বিপরীতে তাদের বিপদাপদ, দুঃখ-দুর্দশা, ক্ষয়ক্ষতি এবং সর্বশেষ জাহান্নামে অনন্তকাল থাকার কারণ হয়ে দাঁড়াবে উভয় হকের ক্ষেত্রে তাদের অবহেলা।

আল্লাহ  তাআলা বলেন,

(وَتِلْكَ الْقُرَى أَهْلَكْنَاهُمْ لَمَّا ظَلَمُوا وَجَعَلْنَا لِمَهْلِكِهِمْ مَوْعِدًا)[الْكَهْفِ: 59]

অর্থাৎ, ওইসব জনপদ (যা তোমাদের সামনে রয়েছে) আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দেই, যখন তারা জুলুম অবলম্বন করল। তাদের ধ্বংসের জন্য (-ও) আমি একটি সময় স্থির করেছিলাম।[সুরা কাহফ : 59]

ইমান, উপকারী জ্ঞান, সৎকাজ ও ন্যায়বিচারই কেবল সমগ্র বিশ্বে শান্তি বয়ে আনতে পারে । বিপরীতে অনৈতিকতা এবং মানুষের প্রতি মানুষের অবিচার পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। জীবন-বিধ্বংসী এ জুলুম থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করার জন্যই আল্লাহ শরিয়ত দান করেছেন, জায়েযকে জায়েয করেছেন, হারামকে করেছেন হারাম, কর্তব্যসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন এবং অধিকারকে সুস্পষ্ট করে আবশ্যক করেছেন—যেন একজন মানুষ উভয় জগতে সুখী হতে পারে। এ কারণেই আল্লাহ  সৎকাজে সহযোগিতা, মজলুমের প্রতি দয়া, সহানুভূতি ও সমর্থন, কল্যাণকর কাজে নিজের সবটুকু ব্যয় এবং মন্দ ও ক্ষতি থেকে বিরত থাকাকে ওয়াজিব করেছেন—ভিন্ন পথে মানবজাতি পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবে না।

নুমান বিন বাশির রা.-থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,

مثلُ المؤمنينَ في توادِّهم وتراحُمِهم وتعاطُفِهم، مثلُ الجسدِ إذا اشتكى منه عضوٌ، تَدَاعَى له سائرُ الجسدِ بالسهرِ والحُمَّى"(رواه البخاري ومسلم)

অর্থাৎ, মুমিনদের দৃষ্টান্ত তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি, দয়ার্দ্রতা ও সহমর্মিতার দিক দিয়ে একটি মানব দেহের মত। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন তার সমগ্র দেহতাপ ও অনিদ্রা ডেকে আনে।—বুখারি ও মুসলিম

ইবনু উমর রা.-থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,

المسلم أخو الْمُسْلِمِ، ‌لَا ‌يَظْلِمُهُ ‌وَلَا ‌يُسْلِمُهُ، ‌وَمَنْ ‌كَانَ ‌فِي ‌حَاجَةِ ‌أَخِيهِ ‌كَانَ ‌اللَّهُ ‌فِي ‌حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ"(رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ والترمذي والنسائي)

অর্থাৎ, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করে না এবং তাকে দুশমনের হাতে সোপর্দও করে না। যে ব্যক্তি তার ভাই এর প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা তার বিনিময়ে কিয়ামত দিবসে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।—আবু দাউদ, তিরমিযি ও নাসায়ি

আবু মুসা আশআরি রা.-থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,

الْمُؤْمِنُ ‌لِلْمُؤْمِنِ ‌كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا، وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِه"(رواه البخاري ومسلم).

অর্থাৎ, মুমিন (ব্যক্তিগণ) ইমারত সদৃশ, যার এক অংশ আরেক অংশকে (এক ইট অন্য ইটকে) মজবুত করে।—বুখরি ও মুসলিম

জাবির রা.-থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,

ما من امرئٍ يخذل امرأً مسلمًا في موضِعٍ تُنتهكُ فيه حُرمتُه ويُنتقَصُ فيه من عِرضِه، إلَّا خَذَلَه اللهُ في مواطنَ يُحبُ فيه نصرتَه، وما من امرئٍ ينصرُ مسلمًا في موضعٍ يُنتقَصُ فيه من عرضِه، ويُنتهكُ فيه من حُرمتِه؛ إلَّا نصرَه اللهُ -عز وجل- في مَوطِنٍ يُحبُ فيه نصرتَه"(رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ)

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে এমন স্থানে অপদস্থ করে, যেখানে তার ইজ্জত নষ্ট করা হয় এবং সম্মানে আঘাত করা হয়, তবে আল্লাহ তাকে এমন স্থানে অপমানিত করবেন, যেখানে সে আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবে। অপর পক্ষে, যদি কেউ কোন মুসলমানকে এমন স্থানে সাহায্য করে, যেখানে তার অপদস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে; তবে আল্লাহ তাকে এর বিনিময়ে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে তাঁর সাহায্য অধিক প্রয়োজন হবে।—আবু দাউদ

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ)[التَّوْبَةِ: 71]

অর্থাৎ, মুমিন নর ও মুমিন নারী পরস্পরে একে অন্যের সহযোগী।[সুরা তাওবা : 71]

সুতরাং কষ্ট ও সমৃদ্ধিতে এবং দুশ্চিন্তা ও দুর্যোগে সর্বাবস্থায় একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমের পাশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ)[الْحُجُرَاتِ: 10]

অর্থাৎ, মুমিনগণ ভাই ভাই।[সুরা হুজুরাত : 10]

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ)[الْأَنْبِيَاءِ: 92]

অর্থাৎ, এই যে তোমাদের জাতি-এটা তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব আমার ‘ইবাদত কর।[সুরা আম্বিয়া : 92]

হুজাইফা রা.-থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,

مَنْ ‌لَا ‌يَهْتَمُّ ‌بِأَمْرِ الْمُسْلِمِينَ فَلَيْسَ مِنْهُمْ، وَمَنْ لَا يُصْبِحُ وَيُمْسِي نَاصِحًا لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِإِمَامِهِ وَلِعَامَّةِ الْمُسْلِمِينَ فَلَيْسَ مِنْهُمْ"(رواه الطبراني في الصغير).

যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিষয়ে চিন্তা করে না সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ, তাঁর রসূল, তাঁর কিতাব, তাঁর ইমাম এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণ কামনা করে না, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”—আল-মুজামুস সাগির, তবরানি

হে মুসলিম জাতি! আল্লাহ আপনাদের ওপর পরস্পর সহানুভূতি, সহমর্মিতা, ভালোবাসা, সহযোগিতা সমর্থন ফরজ করেছেন। সুতরাং গাজায় আপনাদের অসহায় ভাই, নারী, শিশু এবং বয়স্কদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন—যাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে দুঃখ-কষ্টে। খাবার ও ঔষধ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। বস্ত্র ও অর্থ নিয়ে তাদের দিকে হাত বাড়ান। তাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করুন। তাদের দুর্দশায় সহমর্মী হোন। সম্ভাব্য সকল পন্থায় তাদের সাহায্য চালিয়ে যান।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ)[سَبَأٍ: 39]

অর্থাৎ, তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, তিনি তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।[সুরা সাবা : 39]

তাদের প্রতি সহমর্মী হোন, আল্লাহ আপনাদের ওপর তাদের সাহায্যকে আবশ্যক করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ)[الْأَنْفَالِ: 73]

অর্থাৎ, যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা পরস্পরে একে অন্যের অলি-ওয়ারিশ। তোমরা যদি এরূপ না কর, তবে পৃথিবীতে ফিতনা ও মহা বিপর্যয় দেখা দেবে।[সুরা আনফাল : 73]

ফিলিস্তিনিদের সাথে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই। মুসলিম উম্মার কর্তব্য তাদের পাশে দাঁড়ানো। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভয় এবং তাঁর প্রতি ইমানই মুসলমানদেরকে নিজেদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ)[النَّحْلِ: 128]

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই সাথি, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা ইহসানের অধিকারী হয়।[সুরা নাহল : 128]

আল্লাহ যাদের সাথে আছেন, তাদের কোনো ভয় নেইশত্রুর মোকাবেলায় ধৈর্য ও তাকওয়াই তাদের একমাত্র হাতিয়ার।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ)[آلِ عِمْرَانَ: 120].

অর্থাৎ, তোমরা সবর ও তাকওয়া অবলম্বন করলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। তারা যা-কিছু করছে তা সবই আল্লাহর (জ্ঞান ও শক্তির) আওতাভুক্ত।[সুরা আলে ইমরান : 120]

আল্লাহ আমাকে-আপনাকে মহিমান্বিত কুরআনের বারাকা দান করুন এবং তাঁর আয়াতসমূহ ও জিকির এবং রসূল সা.-এর নির্দেশনা ও তাঁর ন্যায়নিষ্ঠ বক্তব্য দিয়ে আমাদের উপকৃত করুন। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনারাও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুননিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

 

দ্বিতীয় খুতবা

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি কিতাব নাজিল করেছেন, মেঘ পরিচালনা করেন এবং সকল অত্যাচারীগুষ্ঠিকে পরাভূত করেন। জানা-অজানা সকল নিয়ামতের জন্য আমরা তাঁর প্রশংসা করি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, যিনি পরম করুণাময় ও দয়ালু। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমাদের নবি ও আদর্শ মুহাম্মদ সা. তাঁর বান্দা ও রসূল। যিনি কিয়ামত দিবসে সুপারিশ করবেন এবং তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও সাহাবাদের ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। 

হে মুসলিমগণ! ইখলাসের সাথে আমলের মাধ্যমে আল্লাহকে ভয় করুন। তাহলে তিনি আপনার আমলকে পরিশুদ্ধ করবেন। আপনার পুরস্কারকে মহিমান্বিত করবেন এবং আপনার সকল বিষয়ের দায়িত্ব নেবেন।

হে মুসলিমগণ! ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর নির্দেশকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরুন। বিভক্ত হবেন নানিজেদের ওপর আপতিত বিপদাপদ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। বিভেদ ও মতানৈক্য থেকে সাবধান থাকুন। সর্বদা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। বিভাজন ও মতানৈক্য দ্বীন ও উম্মাহর জন্য দুর্বলতা ও বিপদ বয়ে আনে। একতাই শক্তি। একতাই গৌরবের সাথে বেঁচে থাকার সহায়ক। অবিচল, ধৈর্যশীল এবং বিশ্বাসীদেরকেই আল্লাহর সুনিশ্চিত বিজয় দান করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(قُلْ إِنَّ الْأَمْرَ كُلَّهُ لِلَّهِ)[آلِ عِمْرَانَ: 154]

অর্থাৎ, সবকিছুই আল্লাহর হাতে।[সুরা আলে ইমরান : 154]

হাদিসে এসেছে,

وَاعْلَمْ ‌أَنَّ ‌النَّصْرَ ‌مَعَ ‌الصَّبْرِ، وَأَنَّ الْفَرَجَ مَعَ الْكَرْبِ، وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا"(رواه أحمد والترمذي)

অর্থাৎ, জেনে রেখো সবরেরই সাথে রয়েছে আল্লাহর সাহায্য, সংকটেরই সাথে রয়েছে পরিত্রাণ এবং কষ্টেরই সাথে রয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য।[আহমাদ, তিরমিযি]

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ)[آلِ عِمْرَانَ: 200].

অর্থাৎ, হে মুমিনগণ! সবর অবলম্বন কর, মুকাবিলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন কর এবং সীমান্ত রক্ষায় স্থিত থাক। ৮৪ আর আল্লাহকে ভয় করে চল, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।[সুরা আলে ইমরান : 200]

আল্লাহর বান্দাগণ!

(إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا)[الْأَحْزَابِ: 56]

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠান। ৪৯ হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি দরূদ পাঠাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।[সুরা আহযাব : 56]

রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।’

সুতরাং পূর্বাপর সকলের মাননীয় এবং রসূলগণের ইমামকে সালাত ও সালাম করুন।

হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ সা. ও মুহাম্মাদের পরিবারের ওপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহিম ও ইবরাহিমের পরিবারের ওপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাজিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের ওপরে, যেমন আপনি বরকত নাজিল করেছেন ইবরাহিম ও ইবরাহিমের পরিবারের ওপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ, খুলাফায়ে রাশিদিন এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত ইমামগণ—আবু বকর, উমর, উসমান আলি, সকল সাহাবি এবং তাঁদের অনুসারীদের সাথে আমাদের প্রতিও সন্তুষ্ট হোন—হে পরম করুণাময় দয়াময়

হে আল্লাহ, অনুগ্রহ করে ইসলাম মুসলিমদের সম্মানিত করুন। আপনি সবকিছু করতে সক্ষম। হে আল্লাহ, ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্রকে অকার্যকর করে দিন, তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিন, আপনি সব কিছু করতে সক্ষম। হে আল্লাহ, ধর্মদ্রোহিদের লাঞ্ছিত করুন, যারা আপনার দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণ করেযে দ্বীন আপনি নিজে দান করেছেন এবং আপনার নবি মুহাম্মদ ও মুসলিমদের জন্য অনুমোদন করেছেন। হে আল্লাহ, বিদ্রোহীদের বিচ্ছিন্ন করে দিনহে আল্লাহ, আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা আপনার মনোনীত দ্বীন এবং রসূল সা.-এর সুন্নাহ মেনে চলে—যেন আপনার সন্তুষ্টি নিয়ে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি।

হে আল্লাহ, আমাদেরকে কল্যাণকর কাজের তাওফিক দান করুন, মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকার সামর্থ্য দান করুন। আমাদেরকে আপনার আনুগত্যে অটল রাখুন। আপনার অবাধ্যতা থেকে দূরে রাখুন। হে আল্লাহ, প্রতিটি মুমিন নর-নারীকে সমস্যা থেকে মুক্তি দিন। মুসলমানদের কষ্ট দূর করুন দুর্দশাগ্রস্তদের দুশ্চিন্তা দূর করুন। মুসলিম ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ করার তাওফিক দান করুনআপনার রহমত অনুগ্রহে আমাদের অসুস্থদের সুস্থ করুন, হে করুণাময়

হে আল্লাহ, হে আরশের মালিক, হে রাজাধিরাজ, আল-আকসাকে ইহুদিদের নাপাক হাত থেকে পবিত্র করুন। আকসাকে তাদের নাপাক সংস্পর্শ থেকে মুক্ত করে আপনার নিরাপত্তায় রাখুন । হে আল্লাহ, বিচার দিবস পর্যন্ত চিরকালের জন্য আকসাকে আপন মহিমায় আপনার দায়িত্বে রাখুন। মুশরিকদের শিরক থেকে পরিশুদ্ধ করুন। েহ আল্লাহ, গাজায় আমাদের ভাইদের সাহায্য করুন। নারী-শিশু, যুবক-বৃদ্ধ সবাইকে আপনি শহিদ হিসেবে কবুল করুন। তাদের ওপর অত্যাচারী ইহুদিদের চাপিয়ে দিবেন না। হে আল্লাহ, ইহুদিদের চক্রান্তকে নস্যাৎ করুন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করুন, তাদের ষড়যন্ত্রকে অকার্যকর করে দিন। হে আল্লাহ, ফিলিস্তিনিদেরকে আপনার হেফাজত ও সুরক্ষায় রাখুন।

হে আল্লাহ আমাদের আমল ‍ও চাওয়াগুলো কবুল করুননিশ্চয় আপনি সবকিছু শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।

(رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)[الْبَقَرَةِ: 201]

অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দান কর দুনিয়ায়ও কল্যাণ এবং আখিরাতেও কল্যাণ এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।[সুরা বাকারা : 201]

হে আল্লাহ, আমাদের অন্তরকে আপনার আনুগত্যে অটল রাখুনআমাদেরকে সত্যকে সত্য হিসেবে দেখান এবং তার অনুসরণ করার তওফিক দান করুন। মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে দেখান এবং আমাদেরকে তা পরিহার করার তাওফিক দান করুন। মিথ্যাকে আমাদের জন্য অস্পষ্ট করে দিবেন না। আমাদের পূর্বাপর সকল অপরাধ ক্ষমা করে দিন। আমরা আপনার কাছে জান্নাত এবং এমন আমলের প্রার্থনা করি, যে আমল জান্নাতে যাওয়ার সহায়ক হবে। আমরা জাহান্নাম এবং এমন কথা বা কাজ থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই—যার কারণে জাহান্নামে যেতে হয়।

আল্লাহর বান্দাগণ!

(اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا * وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا)[الْأَحْزَابِ: 41-42]

অর্থাৎ, আল্লাহকে স্মরণ কর অধিক পরিমাণে। এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তার তাসবীহ পাঠ কর।[সুরা আহযাব : 41-42]

(إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ)[النَّحْلِ: 90]

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ, দয়া এবং আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের হক) প্রদানের হুকুম দেন আর অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও জুলুম করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।[সুরা নাহল : 90]

আল্লাহকে স্মরণ করুন, তিনি আপনাকে স্মরণ করবেন। তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুন, তিনি আপনাকে বাড়িয়ে দিবেন। আল্লাহর জিকিরই সবচেয়ে মহান। বান্দার প্রতিটি আমল সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত।


(কিঞ্চিত সংক্ষেপিত)

ভাষান্তর : মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম 

মন্তব্য (...)

সংস্কার, পুনর্বাসন এবং নিপীড়িতদের প্রতি সমর্থনের আহ্বান [মসজিদে নববির জুমার খুতবা (২৪ নভেম্বর, ২০২৩)] | মুসলিম বাংলা